৩০+ বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২০২৫
বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২০২৫ – এখানে থাকছে ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও MCQ, সহজ ব্যাখ্যায় বিশ্লেষণ, যাতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়কভাবে।
বায়ান্নর দিনগুলো বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য যে রক্তস্নাত সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল।
তারই প্রতিচ্ছবি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ নামক এই গদ্যে ফুটে উঠেছে। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ, ছাত্রদের প্রতিবাদ, পুলিশের নিষ্ঠুরতা – সব মিলিয়ে এক বেদনাময় ও গৌরবময় ইতিহাস উঠে এসেছে এতে।
এটি শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ। এই লেখাটি পাঠ্যবইয়ে সংযোজিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শুধু বই পড়েই নয়, বরং সেই সময়ের আবেগ, বেদনা ও চেতনা অনুভব করতে পারে।
বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল MCQ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যটি কোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা?
A. স্বাধীনতা যুদ্ধ
B. কৃষক বিদ্রোহ
✅ C. ভাষা আন্দোলন
D. স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যের লেখক কে?
A. হুমায়ূন আহমেদ
✅ B. শহীদ সোহরাওয়ার্দী
C. জহির রায়হান
D. সেলিনা হোসেন
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়—
A. ১৯৫০ সালে
B. ১৯৫১ সালে
✅ C. ১৯৫২ সালে
D. ১৯৫৩ সালে
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—
A. ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করা
B. উর্দুকে মাতৃভাষা ঘোষণা
✅ C. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া
D. আরবিকে সরকারি ভাষা করা
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যে লেখক ছিলেন—
A. রাজনীতিবিদ
B. সাংবাদিক
✅ C. ছাত্র
D. শিক্ষক
প্রশ্ন: ২১ ফেব্রুয়ারি কী দিবস?
A. স্বাধীনতা দিবস
B. আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস
✅ C. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
D. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
প্রশ্ন: লেখক কোথায় ছিলেন যখন আন্দোলন চলছিল?
A. খুলনা
B. রাজশাহী
✅ C. ঢাকা
D. কুমিল্লা
প্রশ্ন: পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর কী করেছিল?
A. ফুল ছিটিয়ে দিয়েছিল
B. চা বিস্কুট দিয়েছিল
✅ C. গুলি চালিয়েছিল
D. চুপ করে বসেছিল
প্রশ্ন: যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল?
A. সরকার পতন
✅ B. মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা
C. বিদেশ ভ্রমণ
D. উচ্চশিক্ষা লাভ
প্রশ্ন: শহীদ মিনার প্রথম কোথায় নির্মিত হয়?
A. রাজশাহী
✅ B. ঢাকা মেডিকেল কলেজ
C. চট্টগ্রাম
D. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যে লেখক যে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তা—
A. কাল্পনিক
✅ B. বাস্তব
C. নাটকীয়
D. গল্পভিত্তিক
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের প্রধান অংশগ্রহণকারী কারা ছিলেন?
✅ A. ছাত্ররা
B. পুলিশ
C. সেনাবাহিনী
D. বিচারপতিরা
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা ছিল—
A. ভারতের অংশ
✅ B. তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী
C. স্বাধীন রাষ্ট্র
D. যুক্তফ্রন্টের সদর
প্রশ্ন: লেখকের মনে আন্দোলনের সময় কেমন অনুভূতি হচ্ছিল?
A. আনন্দ
✅ B. শঙ্কা ও গর্ব
C. বিরক্তি
D. অবহেলা
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ কোন ধরনের গদ্য?
A. উপন্যাস
B. গল্প
✅ C. স্মৃতিচারণমূলক
D. প্রবন্ধ
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়?
A. বাংলা পরিত্যাগ
✅ B. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা
C. ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা
D. উর্দুকে একমাত্র ভাষা করা
প্রশ্ন: লেখক কিসের জন্য আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন?
A. চাকরির জন্য
B. স্বাধীনতার জন্য
✅ C. মাতৃভাষার জন্য
D. নির্বাচনের জন্য
প্রশ্ন: লেখকের বিবরণ অনুসারে আন্দোলনে কেমন আবহ ছিল?
A. উৎসবমুখর
✅ B. উত্তেজনাপূর্ণ
C. নিরব
D. স্বাভাবিক
প্রশ্ন: ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে কী করা হয়?
A. খেলা
✅ B. পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ
C. মিছিল
D. ধর্মঘট
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলন কাদের অধিকার আদায়ে ছিল?
A. বণিকদের
✅ B. সাধারণ মানুষের
C. প্রশাসনের
D. বিদেশিদের
প্রশ্ন: লেখক আন্দোলনের সময় কী করছিলেন?
A. শিক্ষকতা
✅ B. ছাত্র হিসেবে অংশ নিচ্ছিলেন
C. সংবাদ সংগ্রহ
D. বই পড়ছিলেন
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ কোথায় সংকলিত?
A. উপন্যাসে
✅ B. পাঠ্যবইয়ে
C. নাটকে
D. গবেষণাপত্রে
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের সময়ে জনগণের মেজাজ ছিল—
A. নিরুৎসাহিত
✅ B. প্রতিবাদমুখর
C. চুপচাপ
D. আনন্দিত
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলন ইতিহাসে কীভাবে পরিচিত?
A. একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা
✅ B. বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম
C. রাজনৈতিক কৌশল
D. বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড
প্রশ্ন: এই গদ্য পাঠের প্রধান শিক্ষা কী?
A. কৌশল
B. রাজনীতি
✅ C. মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা
D. ব্যবসা
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ কোন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত?
A. সপ্তম শ্রেণি
✅ B. নবম-দশম শ্রেণি
C. একাদশ-দ্বাদশ
D. পঞ্চম শ্রেণি
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায় জাতি কোন অর্জন পায়?
✅ A. ভাষার মর্যাদা
B. অর্থনৈতিক উন্নয়ন
C. রাজনৈতিক ক্ষমতা
D. বিজ্ঞান শিক্ষা
প্রশ্ন: ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ হন—
A. শফিক
B. সালাম
C. বরকত
✅ D. রফিক
প্রশ্ন: ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকার রাস্তায় কী ঘটেছিল?
A. মেলা বসে
✅ B. ছাত্রদের মিছিল ও পুলিশের গুলি
C. নীরবতা
D. নির্বাচন
প্রশ্ন: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ পড়ে আমরা কী উপলব্ধি করি?
✅ A. আত্মত্যাগের মূল্য
B. রাজনীতির কৌশল
C. ব্যবসার নিয়ম
D. খেলাধুলার নিয়ম
বায়ান্নর দিনগুলো বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: “বায়ান্নর দিনগুলো” গদ্যে ভাষা আন্দোলনের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা কেমন ছিল? লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যটি আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক অনন্য দলিল। লেখক নিজেই একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ছিলেন। তিনি আন্দোলনের সময়কার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ছাত্রদের মনোবল, সাহসিকতা এবং পুলিশের নিষ্ঠুরতা সব কিছু খুব বাস্তবভাবে তুলে ধরেছেন।
এই লেখায় আমরা দেখি, কিভাবে সাধারণ ছাত্ররা সংগঠিত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে দাবি জানাচ্ছিল। কিন্তু তখনকার শাসকগোষ্ঠী সেই ন্যায্য দাবিকে দমন করতে গুলি চালায়। লেখক একজন আন্দোলনকারী হিসেবেই জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে কোনো ভয় ছিল না—ছিল ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার প্রস্তুতি।
লেখকের ভাষা সহজ, আবেগপূর্ণ এবং বাস্তবতা নির্ভর। তিনি ভাষার প্রতি ভালোবাসা, শহীদদের আত্মত্যাগ ও গণচেতনার কথা অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ইতিহাস নয়, বরং আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করে।
প্রশ্ন ২: “বায়ান্নর দিনগুলো” পাঠ থেকে শিক্ষার্থীরা কী কী নৈতিক শিক্ষা পেতে পারে?
উত্তর: এই গদ্যটি শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু একটি ইতিহাস নয়, বরং নৈতিক শিক্ষার এক উজ্জ্বল উৎস।
🔹 প্রথমত, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা শেখায়। কিভাবে একজন মানুষ নিজের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়, তা এই লেখায় স্পষ্ট।
🔹 দ্বিতীয়ত, একতা ও সাহসিকতা – লেখায় উঠে এসেছে ছাত্রদের সংঘবদ্ধতা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত।
🔹 তৃতীয়ত, আত্মপরিচয়ের প্রতি গর্ব – মাতৃভাষা না থাকলে জাতিগত পরিচয় থাকে না, এই উপলব্ধি শিক্ষার্থীদের মনে গেঁথে দেয় লেখাটি।
🔹 এছাড়া, অধিকার আদায়ের সঠিক পথ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের গুরুত্ব এবং ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা—এসব শিক্ষা পাওয়া যায়।
এইভাবে, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ শিক্ষার্থীদের নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলে।
প্রশ্ন ৩: ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও শহীদদের আত্মত্যাগ কীভাবে গদ্যে ফুটে উঠেছে? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট গদ্যটিতে অত্যন্ত আবেগপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে বাঙালিরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল ছাত্ররা।
লেখক যেহেতু নিজে একজন আন্দোলনকারী ছিলেন, তাই তিনি আন্দোলনের আগের প্রস্তুতি, উত্তেজনা, পুলিশের হামলা, এবং গুলিতে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো খুব হৃদয়গ্রাহীভাবে বর্ণনা করেছেন।
শহীদ রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের মতো নাম এখানে উল্লেখ না থাকলেও, লেখকের আবেগ ও শব্দ চয়নেই শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা বোঝা যায়। লেখক বারবার বলছেন, “ওরা কি জানত না ওদের মেরে ফেলা হবে?” – এই একটি বাক্যেই ফুটে ওঠে রাষ্ট্রের নিষ্ঠুরতা ও শহীদদের আত্মবলিদানের মহত্ত্ব।
এটি কেবল ইতিহাস নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িত। লেখক সেই আবেগ, সাহস ও গর্বময় ইতিহাস তুলে ধরেছেন এই গদ্যে।
প্রশ্ন ৪: তোমার মতে “বায়ান্নর দিনগুলো” গদ্যটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত কেন?
উত্তর: আমার মতে, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ গদ্যটি পাঠ্যবইয়ে থাকা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। কারণ—
ইতিহাস জানার সুযোগ: ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। এটি না জানলে জাতি হিসেবে আমরা আমাদের শিকড় হারিয়ে ফেলব।
নৈতিক শিক্ষা: এই গদ্যে ভাষার প্রতি ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, সাহস ও অধিকার আদায়ের বার্তা রয়েছে। ছাত্ররা এই লেখার মাধ্যমে মূল্যবোধ শিখতে পারে।
আবেগময় উপস্থাপন: লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি একজন ছাত্র হিসেবে হওয়ায় এটি আরও বাস্তব, হৃদয়ছোঁয়া এবং শিক্ষার্থীদের উপযোগী।
আত্মপরিচয়ের উপলব্ধি: মাতৃভাষা না থাকলে জাতি অচেনা হয়ে পড়ে। এই গদ্য সেই চেতনাকে জাগিয়ে তোলে।
পরীক্ষার গুরুত্ব: একাধিকবার প্রশ্ন এসেছে এই গদ্য থেকে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য এটি অপরিহার্য।
এই সব কারণেই এই গদ্যটি পাঠ্যবইয়ে থাকা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়।
উপসংহার:
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ কেবল একটি গদ্য নয়, এটি এক ঐতিহাসিক দলিল। এখানে ভাষা আন্দোলনের বাস্তব চিত্র, শহীদদের আত্মত্যাগ, আর বাঙালি জাতির লড়াই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা যেন শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, বরং একটি জাতির ইতিহাস জানার জন্যও এই গদ্যটি পড়ে।
এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে এমনভাবে যেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে শিখতে পারে, বুঝতে পারে এবং অনুপ্রাণিত হতে পারে। ভাষা আন্দোলন শুধু অতীত নয় – এটি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও।