কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত জানুন!

প্রাণী ও উদ্ভিদ দুনিয়ায় জীবনের মূল চালিকা শক্তি হলো কোষ বিভাজন। কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি —এই মূল প্রশ্ন থেকেই শুরু করে আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়া, গুরুত্ব ও অবস্থান নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করব। 

কোষ বিভাজনই ডাক দেয় বাচ্চা তৈরির, বয়সের সাথে পুরনো কোষ বদলানোর, ক্ষত সারানোর, আর বীজাণুর বংশবিস্তারের। তাই বোঝা জরুরি—কিভাবে বিভাজন হয়, কত ধরনের, আর প্রত্যেকের কর্মপদ্ধতি কী।

কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়ায় একটি মা–কোষ (parent cell) থেকে দুই বা তার অধিক সমস্যাহীন কন্যা–কোষ (daughter cells) প্রস্তুত হয়, তাকে কোষ বিভাজন বলে। “কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি”—এর উত্তর চার ভাগে ভাগ করা যায়:

  • অ্যামাইটোসিস (Amitosis)
  • প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন (Direct division)
  • পরোক্ষ কোষ বিভাজন (Indirect division; মিটোসিস ও মেইওসিস)
  • অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন (Uncontrolled division; ক্যান্সার)

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে

সংজ্ঞা ও প্রক্রিয়া:

অ্যামাইটোসিস হলো সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন ছাড়া সাইটোপ্লাজম স্প্লিট হয়ে কন্যা কোষ তৈরি। এখানে ক্রোমোজোমের সুস্পষ্ট বিভাজন ঘটেনা; নিউক্লিয়াস সাধারণভাবে ভাগ হয়ে যায়।

গুরুত্ব:

দ্রুত বৃদ্ধি প্রয়োজন যেখানে জটিল মেকানিজম বাধাগ্রস্ত—যেমন ব্যাকটেরিয়া নয়, তবে কিছু এককোষী প্রোটোজোয়া ও বিশেষ টিউমার কোষে দেখা যায়।

কোথায় ঘটে:

কিছু প্রোটোজোয়া (e.g., অ্যামেবা), ফুলের পরাগকণিকা, ও টিউমার কোষে বিরলভাবে ঘটে।

অপত্য কোষ (Germ cells) কাকে বলে

সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিন্যাস:

অপত্য কোষ হলো যেসব কোষ জন্মের পর যৌন বিভাজনের মাধ্যমে гамেট (sperm ও egg) তৈরি করে।

প্রক্রিয়া:

মূলত মেইওসিস (মিয়োসিস) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপত্য কোষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়।

গুরুত্ব:

বংশগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রজননে অপরিহার্য।

পরোক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে

সংজ্ঞা:

পরোক্ষ কোষ বিভাজন হলো মিটোসিস প্রক্রিয়া—যেখানে নিউক্লিয়াস স্তরবিন্যাস (prophase, metaphase, anaphase, telophase) ও সাইটোকাইনেসিস পর্যায়ক্রমে ঘটে।

প্রক্রিয়া পর্যায়:

  • প্রোফেজ: ক্রোমাটিন সংকুচিত হয়ে ক্রোমোজোম তৈরি
  • মেটাফেজ: ক্রোমোজোম সেলের মধ্যরেখায় সারিবদ্ধ
  • অ্যানাফেজ: সোনিকেট বরাবর খোঁচা টানিয়া বিভক্ত
  • টেলোফেজ: নতুন নিউক্লিয়াস তৈরি
  • সাইটোকাইনেসিস: সাইটোপ্লাজম ভাগ

গুরুত্ব:

দেহের বৃদ্ধিবর্ধন, ক্ষত সারানো, কোষ নবীকরণে অপরিহার্য।

প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন কাকে বলে

সংজ্ঞা:

সরাসরি কোষ বিভাজন, যেখানে নিউক্লিয়াস বিভাজন–সংকোচন ছাড়াই কোষ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়।

উদাহরণ:

কিছু এককোষী এলগায় সরাসরি কোষ বিভাজন।

গুরুত্ব:

সহজ প্রক্রিয়া, দ্রুত কোষ সংখ্যা বৃদ্ধি।

অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন কাকে বলে

সংজ্ঞা:

কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়ে যেসব কোষ অপরিমিত বিভাজিত হয়, তাকে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন বা ক্যান্সার বলা হয়।

কারণ:

জেনেটিক মিউটেশন, রেডিয়েশন, রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ, ভাইরাস ইত্যাদি।

পরিণতি:

টিউমার সৃষ্টি, আশেপাশের টিস্যু ভেঙে অনুপ্রবেশ, মেটাস্ট্যাসিস।

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

  • বংশগত বৈচিত্র্য: ক্রসিং ওভার-এর মাধ্যমে জেনেটিক মিক্সিং
  • আনুভূমিক বিবর্তন: নতুন পরাজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধি: গন্তব্য–যৌন প্রজননে অপরিহার্য

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

দ্রুত বৃদ্ধি: যেখানে সরলতা দরকার সেখানে দ্রুত কোষ সংখ্যা বৃদ্ধি

জিনগত স্থিতিশীলতা: ক্রোমোজোম বিচ্ছিন্ন না হওয়ায় কম মিউটেশন

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কোন জীবেই ঘটে

  • এককোষী প্রোটোজোয়া (যেমন অ্যামিবা)
  • ফুলের পরাগকণিকা
  • বিরল কিছু বিষাক্ত টিউমার কোষ

মিয়োসিস কোষ বিভাজন কোথায় ঘটে

প্রাণীর ও মানুষে ফুলিকা (ovaries) এবং শুক্রাশয় (testes)

উদ্ভিদে ফুলের অ্যান্থার ও ওভারিরি

FAQ.

১. কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

কোষ বিভাজন কাকে বলে—মা কোষ থেকে কন্যা কোষ প্রস্তুতি; কত প্রকার—অ্যামাইটোসিস, মিটোসিস (পরোক্ষ), প্রত্যক্ষ ও অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন।

২. অ্যামাইটোসিস ও মিটোসিসের মধ্যে পার্থক্য কী?

অ্যামাইটোসিসে সরাসরি বিভাজন, ক্রোমোজোম বিভাজন নয়; মিটোসিসে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়ার পরোক্ষভাগ এবং সাইটোকাইনেসিস থাকে।

৩. অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনে কী হয়?

ক্যান্সারোজ উৎপত্তি, টিউমার বৃদ্ধি ও আশেপাশ আক্রান্ত টিস্যু ভেঙে ফেলা।

৪. মিয়োসিস কোষ বিভাজন কোথায় হয়?

মানুষে ও অন্যান্য প্রাণীর ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়ে; উদ্ভিদে ফুলের অংশে।

৫. কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণে কী কী ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ?

জিন নিয়ন্ত্রণ, সাইটোকাইনেসিস, সেল সাইকেল চেকপয়েন্ট, বাইন্ডিং প্রোটিন, সিগন্যালিং পাথওয়ে।

উপসংহার:

কোষ বিভাজন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এই নিবন্ধে আমরা বিস্তৃতভাবে দেখলাম অ্যামাইটোসিস, মিটোসিস, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভাজন, অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন ও মিয়োসিসের গুরুত্ব। জীবনের প্রতিটি স্তরে কোষ বিভাজনই শক্তি যোগায়—শিশুর গঠন, প্রাপ্তবয়স্ক বৃদ্ধিবৃদ্ধি, ক্ষত নিষ্পত্তি ও বংশগত বৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org